বিট লবণ বা বিট নুন; (হিন্দি: काला नमक , নেপালি: बिरे नुन,মারাঠি: काळं मीठ; গুজরাটি: સંચળ, তামিল: இந்துப்பு, মালয়ালম: ഇന്തുപ്പ്,উর্দু: نمک کالا) এক প্রকারের চুল্লীতে শুষ্ক ভাজা খনিজ লবণ। সাধারণত এই খনিজ লবণটি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপালের হিমালয় এর আশপাশের লবণসমৃদ্ধ মাটির নিচ থেকে পাথর আকারে উত্তোলন করা হয়।[১][২]
বিট লবণের গুঁড়ো
মশলা হিসেবে ব্যবহৃত এই বস্তুটিতে অন্যান্য বিভিন্ন উপাদানের সাথে মূলত সোডিয়াম ক্লোরাইড আছে, যার থেকে এর রঙ এসেছে। গন্ধটি মূলত এর সালফার উপাদানগুলির কারণে হয়। এই খনিজের মধ্যে গ্রেগাইটের উপস্থিতির কারণে (Fe3S4, ফেরাস (II,III) সালফাইড), গোটা অবস্থায় এটির রং বাদামী গোলাপী থেকে গাঢ় বেগুনী স্বচ্ছ স্ফটিকের মত থাকে। যখন গুঁড়িয়ে ধুলার মত করা হয়, এর রঙ বেগুনি থেকে গোলাপী পর্যন্ত হয়।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে কালা নমকের প্রশংসা করা হয়েছে এবং একে এর বিশেষ চিকিৎসা গুণাবলী থাকার কারণে ঔষধিতে ব্যবহৃত হয়েছে।[৩][৪]
বিট লবণ উৎপাদনের কাঁচামালটি মূলত, হিমালয় লবণের শ্রেণীর খনি থেকে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক হ্যালাইট হিসেবে, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের কিছু নির্দিষ্ট জায়গা থেকে পাওয়া যায়,[১][২] অথবা, এর আবাদ করা হয় উত্তর ভারতের সম্ভার লবণ হ্রদ বা দিদওয়ানা এবং নেপালের মুস্তাঙ জেলায়।[৫]
প্রকৃতিতে, লবণটি তার তুলনামূলক রঙহীনরূপে পাওয়া যায়। এটিকে বিজারণ রাসায়নিক প্রক্রিয়া মাধ্যমে গাঢ় রঙের বিট নুনে পরিণত করে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির উপযোগী করা হয়। এর ফলে প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত কাঁচা লবণের কিছু সোডিয়াম সালফেট তীব্র গন্ধযুক্ত সোডিয়াম সালফাইড এবং হাইড্রোজেন সালফাইডে রূপান্তরিত হয়।[৬] এর জন্য কাঠকয়লাসহ একটি সিরামিক ঘড়ায় বন্ধ করা কাঁচা নুনকে কোনও চুল্লিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে পোড়ানো হয়। এর সঙ্গে অল্প পরিমানে থাকে হারাদ বীজ, আমলকী, বাহেরা, বাবুল বাকল বা ন্যাট্রোন।[৫][৬] আগুনে লবণ গলে যায়, রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে, এরপর লবণকে ঠাণ্ডা করা হয়। বিক্রির আগে একে বেশ কিছুদিন বন্ধ করে রেখে দেওয়া হয়।[১][৭] এই পদ্ধতিতে উত্তর ভারতে হরিয়ানার হিসার জেলায় অনেক জায়গায় বিট নুন প্রস্তুত করা হয়।[৬] লবণের স্ফটিকগুলি কালো রঙের হয়, কিন্তু সূক্ষ্ম গুঁড়োতে পরিণত করলে গোলাপী রঙের হয়।
যদিও প্রাকৃতিক লবণে প্রয়োজনীয় মিশ্রণগুলি দিয়ে বিট নুন উৎপাদন করা যায়, এটি এখন সাধারণত কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়। সাধারণত সোডিয়াম ক্লোরাইডে কম পরিমাণে সোডিয়াম সালফেট, সোডিয়াম বাইসালফেট এবং ফেরিক সালফেট মিশ্রিত করে এটি করা হয়। এরপর এটিকে চুল্লিতে কাঠকয়লা দিয়ে রাসায়নিকভাবে বিজারিত করা হয়। সোডিয়াম ক্লোরাইড, ৫-১০% সোডিয়াম কার্বোনেট, সোডিয়াম সালফেট এবং কিছু চিনির বিজারিত তাপীয় পদ্ধতির মাধ্যমে অনুরূপ পণ্য তৈরি করা সম্ভব।[৬]
বিট লবণ মূলত সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং অল্প সোডিয়াম সালফেট,[৮][৯] সোডিয়াম বাইসালফেট, সোডিয়াম বিসালফাইট, সোডিয়াম সালফাইড, আয়রন সালফাইড এবং হাইড্রোজেন সালফাইডের অপদ্রব্য দিয়ে তৈরি।
সোডিয়াম ক্লোরাইড থেকে এর নোনতা স্বাদটি আসে, আয়রন সালফাইড থেকে তার গাঢ় বেগুনি রঙটি আসে, এবং সমস্ত সালফার মিশ্রণগুলি বিট লবণের সুস্বাদের পাশাপাশি একটি অতি বৈশিষ্ট্যসূচক গন্ধ দেয়। এর বিশেষ গন্ধের জন্য হাইড্রোজেন সালফাইড মূলত দায়ী। আম্লিক বাইসালফেট / বাইসালফাইটগুলি একটি হালকা টক স্বাদ দেয়।[২] যদিও বেশি পরিমানে হাইড্রোজেন সালফাইড বিষাক্ত, খাদ্যে ব্যবহৃত বিট লবণের উপস্থিতির পরিমাণ কম এবং তাই স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব নগণ্য।[২] পচা ডিম এবং নষ্ট দুধের গন্ধের অন্যতম উপাদান হাইড্রোজেন সালফাইডও।[১০]
বাংলাদেশ, নেপাল, ভারত এবং পাকিস্তানের দক্ষিণ এশীয় খাবারে বিট লবণ মশলা হিসাবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া চাট, চাটনি, স্যালাড, সব ধরনের ফল, রায়তা এবং অনেকগুলি মজাদার ভারতীয় খাবারে এই নুন দেওয়া হয়। চাট মশালা, যেটি একটি ভারতীয় মশালার মিশ্রণ, তার বিশেষ সালফারযুক্ত শক্ত-সিদ্ধ ডিমের গন্ধের জন্য বিট লবণের উপর নির্ভরশীল। যারা বিট লবণে অভ্যস্ত নয়, তারা প্রায়ই এর গন্ধকে পচা ডিমের গন্ধের মতো বলে।[৩] ডিমের স্বাদ নকল করে এমন কিছু খাবারে বিট লবণের উপস্থিতি নিরামিষীদের প্রশংসা পেয়েছে।[১১] আয়ুর্বেদে বিট লবণকে শীতল মশলা বলা হয় এবং একটি বিরচক এবং হজম সহায়ক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।[১][৮][৯][১২] এটি অপান এবং অম্বল উপশম করে বলেও মনে করা হয়। জম্মুতে এটি গলগন্ড নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।[১২] এই লবণটি হিস্টিরিয়া চিকিৎসার জন্যও ব্যবহৃত হয় এবং অন্যান্য খনিজ এবং উদ্ভিদের উপাদানগুলির সাথে এটি সংযুক্ত করে দন্ত মঞ্জন তৈরি করা হয়।[১]
বিট লবণ যাকে বলা হয়ে থাকে ‘রক সল্ট’ কিংবা ব্ল্যাক সল্ট Black salt. যার আরেকটি নাম সুলেমানী সলন; (উর্দু: نمک کالا, নেপালি: বিরে নুন, হিন্দী: কালো salt, মারাঠি: কালাম মথ; গুজরাটি: সংচল, তামিল: இந்துப்பு, মালয়ালাম: ഇന്തുപ്പ്) এক ধরনের খনিজ সিল। সাধারণত বিট লবণ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল এর নিকটবর্তী হিমালয় লবণ সমৃদ্ধ থেকে মাটিতে নিচের পাথর আকারে উত্তোলন করা হয়। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত ও নেপালে এই লবন খনি আছে।
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার রন্ধনপ্রণালীতে বিট লবণ খুব পরিচিত নাম। এটি কালো লবণ বা সুলেমানি লবণ নামেও পরিচিত। চাটনি, সালাদ, ফল, জুস, বোরহানি, ফুচকা, রাইতাসহ প্রায় সব ধরনের ভারতীয় ও চাইনিজ খাবারে বিট লবণের ব্যবহার রয়েছে।
বিট লবণের উপাদান
সাধারণ লবনের মত এটাতেও সোডিয়াম ক্লোরাইড থাকে যা টক ভাব আনতে সাহায্য করে তবে, এর সাথে আরো যুক্ত হয় আয়রন সালফাইড যা এর ধুসর রং আনতে সাহায্য করে আরেকটা হলো হাইড্রোজেন সালফাইড(পচা ডিমের মত গন্ধ) ,যা এর কটু গন্ধ আনার ক্ষেত্রে দায়ী।
আর সাধারণ লবণের সাথে দোষ-গুণ বলতে তেমন কিছু নেই তবে, এটাকে যাদের হাই ব্লাড প্রেসার আছে তাদের জন্য ভালো বলা হয় কারণ, এখানে সোডিয়াম এর মাত্রা কম থাকে ! তবে, এখনকার বিট লবণে এই সোডিয়াম নাকি নিয়ন্ত্রণে রাখেনা সাধারণ লবণের মতই থাকে কাজেই, হাই ব্লাড প্রেসার মানুষদের জন্য খুব একটা সুবিধা করতে পারবেনা !
সুতরাং বলা যায়, বিট লবণের প্রধান উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে সোডিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম সালফেট, লোহা, ম্যাগনেসিয়াম, ফেরিক অক্সাইড, ফেরাস সালফেট ও ফ্লুরাইড ইত্যাদি।
ফ্লুরাইড ও বিট লবণ
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, বিট লবণে প্রায় প্রতি মিলিয়নে রয়েছে আড়াইশ শতাংশ পরিমাণ ফ্লুরাইড। এটি পটাশিয়াম বা সোডিয়াম যেকোনো ফ্লুরাইড হতে পারে। যা প্রচুর টক্সিন সমৃদ্ধ।
৪.৯ গ্রাম অর্থাৎ, প্রতি চা চামচ বিট লবণে রয়েছে ০.৫৬ গ্রাম ফ্লুরাইড। ফ্লুরাইড থাইরয়েড গ্রন্থি, হাড়, জয়েন্টের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। এটি এমন একটি উপাদান যা সীসা, পারদ ও রেডন গ্যাসের (radon gas) মতোই বিষাক্ত।
ফ্লুরাইড কি
দাঁত ও হাড়ের গঠনে ফ্লুরাইড প্রয়োজনীয় উপাদান। মানবদেহে ফ্লুরাইডের সহনীয় মাত্রা ২ থেকে ৩ মিলিগ্রাম। কিন্তু তা যদি ৪ মিলিগ্রামের ওপরে চলে যায় তাহলে তা বিষে পরিণত হয়। খাবার পানিতেও ফ্লুরাইড রয়েছে। এক লিটার পানিতে ০.৫ থেকে ১.০ মিলিগ্রাম ফ্লুরাইড থাকে। এর বেশি মাত্রায় থাকলে তা দূষণ পর্যায়ে চলে যায়।
শরীরে ফ্লুরাইডের অতিরিক্ত মাত্রা ফ্লুরোসিস নামের রোগ তৈরি করে। ফলে ওজন হ্রাস পায়, ত্বকে প্রদাহ দেখা দেয়, দাঁতের ক্ষতি হয় ও চুল পড়া থেকে শুরু করে নানা সমস্যা দেখা দেয়।
বিট লবণের অনেক উপকারিতা রয়েছে যা সাধারণভাবে আমরা অনেকেই জানি না। এই লবণ বা নুন আপনার জন্য অনেক উপকার বয়ে আনতে পারে, পারে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি দিতে।
বিট নুন সহজেই বমি বমিভাব, অম্লতা বা কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। বিট নুন অম্লতা দূর করতে পারে। এ ছাড়া বিট লবণ কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, হতাশা এবং পেট সম্পর্কিত অনেক সমস্যা দূর করতে কার্যকর বলে বিবেচিত হয়।
নিজের অজান্তেই শরীরের অনেক রোগ থেকে মুক্তি মেলে। আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিট লবণ অনেক মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে। অ্যাসিডিটি বা কোষ্ঠকাঠিন্যতা ও বমি বমি ভাবের মতো সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।
ভারতের আয়ুর্বেদ চিকিৎসক আবরার মুলতানির মতে, বিট লবণ বা কালো লবণ গ্যাসের সমস্যা দূরে অনেক সহায়তা করে। সেই সঙ্গে কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, অবসাদ এবং পেট সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান এই লবণ। এ জন্য প্রতিদিন সকালে গরম পানিতে বিট লবণ মিশিয়ে খাওয়ার ফলে শরীর সুস্থ থাকবে।
খাবারকে চটজলদি সুস্বাদু করলেও বিট লবণের রয়েছে কিছু ক্ষতিকর প্রভাব, যেমন – এই লবণ, যাদের হাই ব্লাড প্রেসার আছে তাদের জন্য ভালো বলা হয় কারণ, এইখানে সোডিয়াম এর মাত্রা কম থাকে ! তবে, এখনকার বিট লবণে এই সোডিয়াম নাকি কম পরিমানে থাকে না, সাধারণ লবণের মতই থাকে। কাজেই, হাই ব্লাড প্রেসার মানুষদের জন্য বিট লবন খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না।
১. ফ্যাট পোড়াতে সহায়ক
আমাদের দেহে উপস্থিত বিপজ্জনক ব্যাকটিরিয়া দূর করে এবং দেহে বর্ধিত ফ্যাট পোড়াতে সহায়ক। শুধু এটিই নয়, এটি খাবারের স্বাদকে বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। আয়ুর্বেদ বিশ্বাস করেন যে প্রতিদিন সকালে সকালে উত্তপ্ত জলে বিট নুন মিশ্রণ শরীর সুস্থ রাখে।
২. হাড় শক্ত হয়
বিট লবণ অনেক পুষ্টি এবং খনিজ সমৃদ্ধ। এটি নিয়মিত খাওয়া হলে শরীরের হাড় শক্ত হয়ে যায় ।
৩. পেটের গ্যাস ও অন্যান্য সমস্যা দূর করে
খাদ্য পরিপাকজনিত সমস্যা, পেটে গ্যাস হওয়া, বুক জ্বালাপোড়া করা এমনকি কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে বিট লবণ।
৪. ডায়বেটিস রোগীদের জন্য উপকারী
চডায়বেটিস রোগীদের সাদা লবণের চেয়ে বিট লবণের বেশি ব্যবহার করা উচিত্। বিট নুন শরীরে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে কাজ করে এবং তারা আরও সুস্থ বোধ করবে।
৫. বুক জ্বালাপোড়া করা কমায়
এটি আপনার বুক জজ্বালাপড়া কমাতে সাহায্য করে।
৬. অল্প বয়স্ক শিশুদের জন্য সবচেয়ে উপকারী
ছোট বাচ্চাদের জন্য বিট নুনকে সবচেয়ে উপকারী বলে মনে করা হয়। এটি বুক থেকে বদহজম এবং কফ জমে সরিয়ে দেয়। আপনার শিশুর খাবারে প্রতিদিন খানিকটা বিট লবণ যুক্ত করুন, কারণ এটি পাকস্থলিকেও ঠিক রাখে এবং ক্লেদ ইত্যাদি থেকে মুক্তি পাবে।
৭. হজম শক্তি বা খাদ্য পরিপাকজনিত সমস্যা দূর করতে পারে।
বিট নুন আমাদের হজম শক্তি বাড়িয়ে তুলতে পারে। উপরন্তু, এটি সেরেটোনিন হরমোনও বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা আমাদের শিথিল রাখতে সহায়তা করতে পারে।
৮. ক্ষুধাভাব কমায়
ওজন কমানোর চেষ্টায় থাকলে বিট লবণ ভালো একটি সহায়ক হতে পারে। ঘনঘন ক্ষুধাভাব কমানোর জন্য বিট লবণ উপকারি।
৯. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
সাদা লবণ যেখানে রক্তচাপ বৃদ্ধির জন্য দায়ী, সেখানে বিট লবণ উচ্চরক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করে। এমনকি রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে সাদা লবণের পরিবর্তে বিট লবণ খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা।
১০. ঘুমের সমস্যা কমায়
রাতে ভালো ঘুম না হলে অথবা ইনসমনিয়ার সমস্যা থাকলে নিয়মিত বিট লবণ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ঘুমের সমস্যা মূলত দেখা দেয় শরীরে মেলাটোনিনের মাত্রার তারতম্য দেখা দিলা। বিট লবণ এই মেলাটোনিনের মাত্রাকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে।
১১. ঠাণ্ডার সমস্যায় উপকারি
সাইনাসের সমস্যা, শুকনা কাশি, গলাব্যথ্যা কিংবা ঠাণ্ডা সর্দির সমস্যায় গরম পানির সঙ্গে বিট লবণ মিশিয়ে গার্গল করলে উপকার পাওয়া যাবে।
১২. ক্লান্তি দূর করে
কর্মব্যস্ত সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে এক গ্লাস পানি বিট লবণ ও এক টুকরো লেবু মিশিয়ে পান করুন। দেখবেন মুহূর্তেই চাঙ্গা বোধ করছেন।
১৩. ত্বকের সুরক্ষায় বিট লবণ
স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা তো জানানো হলো, এবার জানুন বিট লবণ ব্যবহারে ত্বকের উপকারিতা। এই লবণ ত্বকের উপরিভাগের ময়লা ও মরা চামড়া দূর করতে প্রাকৃতিক স্ক্রাবার হিসেবে কাজ করে। এছাড়া, বন্ধ রোমকূপ খুলে ভেতরের ময়লা দূর করে ত্বকে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা এনে দিতেও দারুণ কার্যকর বিট লবণ।
বিট বা কালো লবণের উপকারিতা :
অনেকেই আছেন অনাকাঙ্ক্ষিত বেড়ে যাওয়া ওজন কমাতে চান। তাদের জন্য এই লবণ খুব সহায়ক। এই লবণে উপস্থিত খনিজগুলো অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে থাকে। ফলে শরীরে উপস্থিত বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়া দূর হয়। এছাড়াও এ লবণে সোডিয়ামের উপাদান বেশি রয়েছে। তাই শরীর সতেজ ও চাঙা রাখতে বিট লবণ অনেক উপকারী।
হজমজনিত সমস্যা এবং শরীরের কোষে পুষ্টি সরবরাহ করে বিট লবণ। এমনকি স্থূলতা নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে থাকে। পুষ্টি এবং খনিজ সমৃদ্ধ হওয়ায় নিয়মিত খাওয়ার ফলে শরীরের হাড় অনেক মজবুত থাকে।
এদিকে যারা সুগারের রোগী তাদের সাদা লবণের পরিবর্তে বিট লবণ খাওয়া উচিত। রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে বিট লবণ।
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, বিট লবণে প্রায় প্রতি মিলিয়নে রয়েছে আড়াইশ শতাংশ পরিমাণ ফ্লুরাইড। এটি পটাশিয়াম বা সোডিয়াম যেকোনো ফ্লুরাইড হতে পারে। যা প্রচুর টক্সিন সমৃদ্ধ। ৪.৯ গ্রাম অর্থাৎ, প্রতি চা চামচ বিট লবণে রয়েছে ০.৫৬ গ্রাম ফ্লুরাইড। ফ্লুরাইড থাইরয়েড গ্রন্থি, হাড়, জয়েন্টের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক।
এছাড়াও এটি রক্তস্বল্পতা, রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি ও পাকস্থলির ঝিল্লির ক্ষতি করতে পারে। এটি এমন একটি উপাদান যা সীসা, পারদ ও রেডন গ্যাসের (radon gas) মতোই বিষাক্ত। দাঁত ও হাড়ের গঠনে ফ্লুরাইড প্রয়োজনীয় উপাদান। মানবদেহে ফ্লুরাইডের সহনীয় মাত্রা ২ থেকে ৩ মিলিগ্রাম। কিন্তু তা যদি ৪ মিলিগ্রামের ওপরে চলে যায় তাহলে তা বিষে পরিণত হয়। খাবার পানিতেও ফ্লুরাইড রয়েছে। এক লিটার পানিতে ০.৫ থেকে ১.০ মিলিগ্রাম ফ্লুরাইড থাকে। এর বেশি মাত্রায় থাকলে তা দূষণ পর্যায়ে চলে যায়। শরীরে ফ্লুরাইডের অতিরিক্ত মাত্রা ফ্লুরোসিস নামের রোগ তৈরি করে। ফলে ওজন হ্রাস পায়, ত্বকে প্রদাহ দেখা দেয়, দাঁতের ক্ষতি হয় ও চুল পড়া থেকে শুরু করে নানা সমস্যা দেখা দেয়।
অনেকের ধারণা, সাধারণ লবণের চেয়ে বিট লবণে সোডিয়াম কম থাকে বলে তা হয়তো উচ্চরক্তচাপ কমায় ও শরীরের পক্ষে ততটা ক্ষতিকর নয়।
ভারতের দিল্লির ফ্লুরোসিস গবেষণা ও পল্লী উন্নয়ন ফাইন্ডেশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে বিট লবণ খাওয়ায় ভারতে ফ্লুরাইড বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ছাড়িয়েছে প্রায় ৬৬ মিলিয়নেরও বেশি।
এই গবেষণার পর প্রতিষ্ঠানটি বিট লবণ ও বিট লবণ দিয়ে তৈরি স্ন্যাকস বা আয়ুর্বেদিক ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়।
সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক ২.৩ গ্রামের কম ও পঞ্চাশোর্ধ্বদের ১.৫ গ্রাম লবণ খাওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে লবণে যদি ফ্লুরাইড থাকে তাহলে তা হাড় ও জয়েন্টের ব্যথা সৃষ্টি করে, রক্তস্বল্পতা, রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি ও পাকস্থলির ঝিল্লির ক্ষতি করতে পারে।
Related Product
See All
Please Login To Comment
Login Now