গোলাপ জল (ফার্সি: گلاب; গুলাব) হচ্ছে গোলাপ ফুলের পাপড়ি থেকে প্রস্তুতকৃত সুরভীত জল। এছাড়া পাতন প্রক্রিয়ায় গোলাপ তেল থেকে তৈরী করার সময় উপজাত হিসাবে গোলাপ জল তৈরী হয়। ইউরোপ ও এশিয়ায় খাবারকে সুবাসিত করতে, প্রসাধন এবং ঔষধ প্রস্তুত করতে গোলাপ জল ব্যবহৃত হয়। গোলাপ জলের সাথে চিনির মিশ্রনে গোলাপের সিরাপ তৈরী করা হয়।
কাসান, কামসার এবং বারজক অঞ্চলে গোলাপ জল উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ। ফারসি ভাষায় গুল অর্থ ফুল) এবং আব অর্থ জল।
পারস্যের সাসানীয় সাম্রাজ্যে ফুল থেকে বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধ তৈরীর প্রচলন ছিল।[১] আঞ্চলিকভাবে মধ্য পারস্যে গোলাপ জলকে বলা হত golāb এবং বাইজান্টাইন গ্রীক ভাষায় যার প্রতিশব্দ ছিল zoulápin।[২] মধ্যযুগে পারস্যের রসায়নবিদ আভিসেন্না বাষ্পীয় পাতনের মাধ্যমে গোলাপ জল তৈরীর আধুনিক পদ্ধিত আবিষ্কার করেন। যা পরবর্তিতে বাণিজ্যিকভাবে সুগন্ধী ব্যবসায় প্রভাব ফেলে।
গোলাপের সুগন্ধী তৈরী হয় গোলাপের তেল থেকে। যার অন্য নাম হল আতর। এই আতর তৈরীর সময় উপজাত হিসাবে গোলাপ জল প্রস্তুত হয়।
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গোলাপজল/ Rose Water:
গোলাপজল আসলে কী? এটা হচ্ছে প্রকৃতি থেকে পাওয়া সবচেয়ে বিশুদ্ধ উপাদানগুলোর মধ্যে একটা যা আমাদের ত্বকের ন্যাচারাল Ph বজায় রাখতে সাহায্য করে। গোলাপজল ত্বক পরিষ্কার করতে, টোনার হিসেবে, ফেসপ্যাকের সাথে; যেভাবে আপনি চান ব্যবহার করতে পারেন। আর আজকাল বাজারে আসল গোলাপ জল খুঁজে পাওয়া ধীরে ধীরে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আপনি জানেন কি? একটু চেষ্টা করলেই আপনি ঘরেই তৈরি করে ফেলতে পারবেন একদম ১০০% বিশুদ্ধ গোলাপজল! আর আপনাকে কৃত্রিম গোলাপের পারফিউম দেয়া লিকুইড ব্যবহার করতে হবে না। কীভাবে বানাবেন গোলাপজল? আজকের লেখায় সেটাই আপনাদের জানিয়ে দেব -
পদ্ধতি ১- ফ্রেশ গোলাপের পাপড়ি দিয়ে গোলাপজল তৈরি
উপকরণ –
– ১ কাপ ফ্রেশ গোলাপের পাপড়ি (২ টি গোলাপ, কোনভাবেই ফুলের দোকানের কেমিক্যাল দেয়া ফুল নেবেন না। এমন ফুল নিন যাতে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে এতে কোন কীটনাশক বা অন্য কেমিক্যাল ইউজ করা হয়নি।
– ২ কাপ ডিসটিলড পানি (distilled water) । কলের পানি ব্যবহার করলে গোলাপজল বেশিদিন ভালো থাকবে না।
যা করবেন-
– প্রথমে ফ্রেশ গোলাপের পাপড়িগুলো নিন। গোলাপ যত ফ্রশ হবে গোলাপ জলের কোয়ালিটি তত ভালো হবে। আলাদা আলাদা জাতের গোলাপ ব্যবহার করবেন না। এতে গোলাপজলের ঘ্রাণ বিগড়ে যেতে পারে।
– পরিষ্কার পাতিল অথবা সসপ্যানে গোলাপের পাপড়ি রেখে তার উপরে পানি ঢালুন।
– এবার পাত্রটির মুখ ঢেকে খুবই কম আঁচে চুলায় বসান। মনে রাখবেন কোনভাবেই যেন পানি ফোটা শুরু না করে অথবা গোলাপ সিদ্ধ না হয়ে যায়! যদি গোলাপ পাপড়ি তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয়ে পানির রঙ নীল হয়ে যায় তবে ধরে নেবেন আপনার গোলাপজল তৈরি করা হয়নি।
– হালকা গরম পানিতে ১০-১৫ মিনিট গোলাপ পাপড়ি রাখুন। তারপর পাত্রটি চুলা থেকে তুলে নিন। শেষে এসে আপনার পানি হালকা গোলাপি/লাল হতে পারে।
– পানি থেকে পাপড়ি ছাঁকনি দিয়ে আলাদা করে নিন। এবার পানি পুরোপুরি ঠাণ্ডা করুন। ঠাণ্ডা হবার পর পানি আপনার পছন্দের পাত্রে ভরে ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখুন। দেরি করবেন না।
– এভাবে তৈরি গোলাপজল ১ সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন।
পদ্ধতি ২- শুকনো পাপড়ি দিয়ে গোলাপজল তৈরি
উপকরণ-
– বড় সাইজের গ্লাস জার
– ১/৪ কাপ (এক কাপের চার ভাগের ১ ভাগ) শুকনো গোলাপ পাপড়ি।
– ১.৫ কাপ (দেড় কাপ) গরম করে নেয়া distilled পানি।
যা করবেন-
– গ্লাস জারের মধ্যে শুকনো পাপড়ি নিন। এক্ষেত্রেও মনে রাখবেন কোন কেমিক্যাল পাপড়িতে আছে এমন সন্দেহ থাকলে সেই গোলাপ ব্যবহার করবেন না।
– ফুটিয়ে নেয়া গরম distilled পানি আস্তে আস্তে জারের ভেতরে পাপড়ির উপর ঢালুন।
– পাত্রের মুখ ঢেকে দিন এবং ১০-১৫ মিনিট পাত্রের পানি ঠাণ্ডা হতে দিন।
– পানি ঠাণ্ডা হয়ে গেলে অন্য একটি পাত্রে ছাঁকনির সাহায্যে গোলাপজল আলাদা করে ঢেলে নিন।
– সাথে সাথে ঠাণ্ডা করে নেয়া গোলাপজল ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখুন। এটাও ১ সপ্তাহ ব্যবহার করতে পারবেন।
দেখলেন? কত সহজ গোলাপজল বানানো? এবার আসুন আরেকবার জেনে নিই, কীভাবে আর কেন গোলাপজল রূপচর্চায় ব্যবহার করা এত উপকারী-
– গোলাপজল অ্যান্টি সেপটিক, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল হবার কারণে আপনার ত্বকে টোনার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য সবচেয়ে সহজলভ্য প্রাকৃতিক উপাদান।
– নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের তেল নিঃসরণ কন্ট্রোল করে, ত্বকের ড্যামেজ সারিয়ে তোলে। ট্যান দূর করে ত্বক উজ্জ্বল করে তোলে।
– শুষ্ক ত্বকের অধিকারীরা সারাদিন ত্বকে আদ্রতা পাওয়ার জন্য যতবার খুশি গোলাপজল ব্যবহার করতে পারবে।
– যেকোনো ত্বকের অধিকারীরা যেকোনো ফেসপ্যাক, মাস্কের সাথে মিশিয়ে গোলাপজল ব্যবহার করতে পারবেন।
– ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে, ধুলা ময়লা দূর করে। যেকোনো সময় ত্বকে মিষ্ট হিসেবে তাই গোলাপজল ব্যবহার করা যায়। গোলাপজল মেখে বা স্প্রে করে টিস্যু দিয়ে মুখ পরিষ্কার করলেই বুঝতে পারবেন মেকআপ রিমুভার আর ফেসওয়াশ হিসেবে এটা কতটা কার্যকরী!
– বয়স্ক ত্বকের মেছতা, বলিরেখা দূরে রাখতে সাহায্য করে।
– ক্লান্ত বসে যাওয়া চোখের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ঠাণ্ডা গলাপজলে তুলা ভিজিয়ে চোখের উপরে রেখে দিলে সাথে সাথে ফল পাবেন।
– শরীরের ফাটা শুষ্ক অংশে গ্লিসারিন মিশিয়ে গোলাপজল ব্যবহার করলে ফাটা, রুক্ষ দেহ মুহূর্তেই হয়ে উঠবে কোমল।
– গোসলের পানিতে ঘরে তৈরি গোলাপজল মিশিয়ে নিলে সারাদিনেও শরীরে দুর্গন্ধ হবে না। দামি স্প্রে, ডিওডরেন্ট ব্যবহারের কোন দরকার হবে না!!
আমাদের রোজকার ব্যস্ত জীবনে নিজেকে সুন্দর দেখতে আমরা সবাই চাই। কিন্তু ত্বকের যত্ন করতে প্রায় ভুলেই যাই।সময়ের অভাবে।কিন্তু তার জন্যই ত্বকের নানান সমস্যায় ভুগতে হয়।আর এর থেকে মুক্তি পাওয়া খুব কঠিন হয়।আজ বলব এমন কিছু সমাধান যা মিনিটের মধ্যেই আপনার ত্বককে সুন্দর রাখতে সাহায্য করবে।গোলাপ জলের নাম তো সবাই জানি কিন্তু আসলে গোলাপ জল ঠিক কিভাবে সাহায্য করে আসুন দেখে নেওয়া যাক।
গোলাপ জলের ব্যবহার কমবেশি আমরা সবাই করি বা করেছি কখনো না কখনো।গোলাপজল ত্বকের সমস্যা থেকে মুক্তিতো দেয়ই এছাড়া গ্লোয়িং এবং হেলদি্ রাখতেও ভীষন ভাবে সাহায্য করে।
গোলাপজলকে টোনার হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন এটি ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য কে ঠিক রাখে। ফেসিয়ালের সময় ব্যবহার করুন ব্রন কমে যাবে এবং ব্রন ওঠাও কমবে। এবং ফেসিয়ালের পর যদি মুখে ফুসকুড়ি হয় তাহলে গোলাপজল লাগিয়ে নিন কমে যাবে।
তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা অনেকেরই আছে এর ফলে নানান সমস্যায় পড়তে হয়।অনেক কিছু করেও অতিরিক্ত তেলকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়না।এই অতিরিক্ত তেলকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ব্যবহার করুন গোলাপজল অনেকটাই মুক্তি পাবেন।গোলাপজল অতিরিক্ত তেলকে নিয়ন্ত্রণ করে আর ত্বকের ছিদ্র গুলিকে প্রয়োজন মত খুলে দেয় যার ফলে বাতাস চলাচল করতে পারে।
টোনারের সঙ্গে ক্লিনজার হিসাবেও খুব ভালো কাজ করে গোলাপজল।ফেসওয়াশ দিয়ে মেকআপ তোলার পরিবর্তে গোলাপজল ব্যবহার করুন এতে সুন্দর ভাবে মেকআপ উঠে যায় আর ত্বক নরমও থাকে।এছাড়াও মুখে জমে থাকা ময়লা যেগুলো সাধারণ ভাবে ওঠেনা সেগুলোকে গোলাপজল খুব সুন্দর ভাবে তুলে ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখে। হেলদি্ স্কিনের জন্য সবথেকে আগে দরকার স্কিনকে ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখা।এই ময়লা জমে নানারকম সমস্যা আসতে থাকে তাই স্কিনকে আগে পরিষ্কার করুন গোলাপজল দিয়ে।
অফিস থেকে ফিরে খুব ক্লান্ত লাগে? এতেও ব্যবহার করুন গোলাপজল।স্নানের জলে একটু গোলাপজল মিশিয়ে স্নান করুন দেখবেন অনেক ফ্রেশ লাগছে।এতে রয়েছে এমন কিছু উপাদান যা শরীর ও মনের ক্লান্তি দূর করে এক সতেজ অনুভূতি দেয়।
গোলাপজলে রয়েছে অ্যাণ্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা ত্বককে সুন্দর রাখার পাশপাশি ত্বকের বিভিন্ন রোগ যেমন ডারমাটাইটিস এর মত রোগ সারাতে সাহায্য করে।
এছাড়াও ব্রন বা অন্যান্য ফুসকুড়ি, বিভিন্ন দাগ, ত্বক ফেটে যাওয়া, ডার্ক সার্কেলের মত সমস্যাকে খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করে।
আপনার কি ঘুমের সমস্যা আছে? কিছুতেই ভালো ঘুম হয়না? আর ওষুধ খেতেও ভালো লাগেনা? তাহলেও ব্যবহার করুন গোলাপজল। বালিশে কয়েকফোঁটা গোলাপজল দিন এর মিষ্টি সুবাস আপনার মেজাজ ফুরফুরে করে আপনকে ভালো ঘুমোতে সাহায্য করে।
ত্বক খুব শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে বা শুষ্ক ত্বক? চিন্তা নেই লাগান গোলাপজল এটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের কাজ করে ফলে ত্বক তার নিজের আদ্রতা ফিরে পায়। আপনার ত্বক হয়ে উঠবে দারুণ মসৃণ।
ছেলেদের শেভিং করার পর ত্বক শুষ্ক,লাল হয়ে যায়।অনেক সময় চুলকানি হয় এই সমস্যা থেকে আপনকে মুক্তি দেবে গোলাপজল।ত্বককে নরম তো করবেই তার সঙ্গে একটা সুন্দর উজ্জলতা দেবে যা বাজারের ক্রিমের থেকে অনেক ভালো কাজ করবে।
সবশেষে বলব গোলাপজলের খুব ভালো গুণ হল এটি ত্বকের সঙ্গে চুলেরও খেয়াল রাখে। লম্বা চুলের স্বপ্ন সবারই থাকে কিন্তু এই চুল মনের মত করতে গিয়ে নানান সমস্যায় পড়তে হয়। যদি চুল সহজে না বারে তাহলেও গোলাপজল আর যদি খুশকির সমস্যা থাকে তাহলেও গোলাপজল ম্যাজিকের মত কাজ করবে।একটু গোলাপজল আর একটু নারকেল তেল নিয়ে খুশকির জায়গায় দিন হালকা ম্যাসাজ করুন দেখবেন কিছু দিনের মধ্যেই খুশকি উধাও।
গোলাপ জলের গুণ যেগুলো আপনি হয়তো জনতেন না আজ জেনে নিলেন লেখাটি পড়ে। তাই আর দেরি কিসের!
গোলাপ জলের কোন উল্লেখযোগ্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। যাইহোক, এতে গোলাপের অপরিহার্য তেল রয়েছে, যা কিছু লোকের অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। তাই গোলাপ জল ব্যবহার করার আগে প্যাচ টেস্ট করে নেওয়া ভালো। আপনি যদি গোলাপ জলের প্রতি সংবেদনশীল হন তবে আপনি অনুভব করতে পারেন:
এগুলি অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার লক্ষণ। এই ধরনের ক্ষেত্রে, অবিলম্বে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন।
Related Product
See All
Please Login To Comment
Login Now