কেওড়া জল ও গোলাপ জল ২০০ মি.লি. ছিটানো গোলাপ জল ১৫০ মি.লি.
কেওড়া জল: কেওড়া জলকে ইংরেজিতে Screw Pine Water বা Pandanus Water বলে। কেওড়া জল পানদানাস (Pandanus) নামক একটি ফুলের নির্যাস। এটি দেখতে স্বচ্ছ তরল, ঠিক গোলাপ জলের মতো দেখতে। কেওড়া জল বিভিন্ন মিষ্টিজাতীয় খাবার, পোলাও, বিরিয়ানি, মাংস, পানীয় ও বিভিন্ন ভাবে রান্নায় ফ্লোরাল ফ্লেভার আনতে ব্যবহার করা হয়।
কেওড়া, কেউদা বা (হিন্দি: केवड़ा,বাংলা: কেওড়া,ওড়িয়া: କିଆ,উর্দু: کیوڑہ,পাঞ্জাবি: ਕੇਵੜਾ) সুগন্ধি স্ক্রুপাইনের পুরুষ ফুল থেকে পাতিত একটি অপরিহার্য তেল। উদ্ভিদটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় এবং এই অঞ্চলগুলির বেশিরভাগ জুড়ে তেলটি একটি স্বাদযুক্ত এজেন্ট হিসাবে ব্যবহৃত হয়।[১]
কেওড়ার বোতল
ফুলটি কেওড়ার একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে যুক্ত বিশেষ উপলক্ষ্য খাবারে ব্যবহৃত হয়।[২] কেওড়া ফুলের একটি মিষ্টি, সুগন্ধযুক্ত গন্ধ থাকে যা গোলাপ ফুলের মতোই মনোরম মানের, তবে কেওড়া বেশি ফলদায়ক। জলীয় পাতন (কেওড়া জল, প্যান্ডানুস ফুলের জল) বেশ পাতলা।[৩] কেওড়া ফুল এবং পাতা হিন্দু দেবী মনসার পূজায়ও অপরিহার্য, যাকে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের দ্বারা পূজা করা হয়।
ভারত থেকে রপ্তানি করা কেওড়া ফুলের প্রায় শতকরা ৯৫ ভাগ গঞ্জাম জেলার বেরহামপুর শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হয়। ছত্রপুর, রেঙ্গেলুন্ডা, পাত্রপুর এবং চিকিটির উপকূলীয় অঞ্চলগুলি তাদের সুগন্ধযুক্ত পান্ডানুস আবাদের জন্য বিখ্যাত। তর্কাতীতভাবে, উপকূলীয় এলাকাগুলির ফুলগুলির একটি সূক্ষ্ম ফুলের নোট রয়েছে যে অভ্যন্তরীণ জাতগুলির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বী সবচেয়ে বিখ্যাত জাতগুলি হল স্থানীয় এবং গোপালপুর-অন-সি-তে চাষ করা হয়৷ কেওড়া ফুলের চাষ গঞ্জাম জেলায় আয়ের একটি প্রধান উৎস এবং এখানে প্রায় ২০০ টি নিবন্ধিত কেওড়া পাতন কারখানা রয়েছে। কেওড়া ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় সুগন্ধি তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়, উভয়ই কার্যকরী সুগন্ধি হিসেবে এবং আতর।
কেউডার স্টেমিনেট ফুলের জল পাতন দ্বারা প্রাপ্ত অপরিহার্য তেলের রাসায়নিক গঠন। কেওড়া তেলের প্রধান উপাদান ২-ফেনিথিল মিথাইল ইথার (৬৫.৬–৭৫.৪%), টেরপিনেন-৪-ওল (১১.৭–১৯.৫%), পি-সাইমি(১.০-৩.১%) এবং আলফা টেরপিনো(১.২-২.৯%) পাওয়া গেছে।[৪]
বিয়েবাড়ির খাবার মানেই কেওড়ার জলের (Kewra Water) সুবাস৷ অনেকের এর স্বাদগন্ধ ভাল লাগে৷ আবার অনেকেরই না-পসন্দ৷ শুধু রসনাতৃপ্তিই নয়৷ কেওড়ার জলের অনেক স্বাস্থ্যগত দিকেও উপকারিতা আছে৷
প্রথমেই জেনে রাখা ভাল, গোলাপজল ও কেওড়ার জল কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা৷ গোলাপজল তৈরি হয় গোলাপের পাপড়ি থেকে৷ কেওড়ার জল পাওয়া যায় প্যান্ডানাস গাছের কাণ্ড থেকে৷ প্রসাধনী শিল্পে অপরিহার্য কেওড়ার জলে আছে ফেনল, ট্যানিন, গ্লাইকোসাইডস, আইসোফ্ল্যাভেন্স, ক্যারটেনয়েডস-এর মতো প্রয়োজনীয় উপাদান৷ পুষ্টিবিদ লভনীত বাতরা তাঁর ইনস্টাগ্রাম পোস্টে কেওড়া জলের একাধিক গুণের কথা বলেছেন (Health Benefits of Kewra Water )৷
আসুন, দেখে নেওয়া যাক সেগুলি-
# অ্যান্টি ইনফ্লেম্যাটরি উপাদানে ভরা কেওড়ার জল অ্যাকনে, সোরিয়াসিস, একজিমা-র মতো ত্বকের সমস্যায় কার্যকর৷
# ঘামের পরিমাণ কমিয়ে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
# এর সুবাস মানসিক প্রশান্তি আনে৷ কেওড়ার জল হৃদস্পন্দনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে৷ যত্নে রাখে হৃদযন্ত্রের পেশিকেও৷
# এছাড়াও কেওড়ার জলের রূপটানের গুণও অসংখ্য৷ ত্বকের যত্নে অনেক দিন ধরেই এর ব্যবহার চলে আসছে৷
# কেওড়ার জল শোধন করে৷ তাই একে ব্যবহার করতে পারেন ক্লেঞ্জার হিসেবে৷ ত্বকে লেগে থাকা ধুলোবালি, দূষণের অংশ সম্পূর্ণ মুছে ফেলে এই তরল৷
# ত্বকের কোথাও সংক্রমণ হলে, লাল হয়ে ফুলে গেলে প্রশমনের জন্য ব্যবহার করুন কেওড়ার জল৷
# টোনার হিসেবেও কেওড়ার জল অসাধারণ৷ ত্বকের ভিতরে প্রবেশ করে নির্জীব ত্বককে ফিরিয়ে দেয় তরতাজা ও নবীন চেহারা৷ স্কিনপোরস-এর মুখ প্রসারিত করে ত্বক পরিষ্কার রাখে৷
# কেওড়ার জলে আছে হাইড্রেটিং এসেনশিয়াল অয়েল এবং উদ্ভিদ নির্যাস৷ এর ফলে শুষ্ক ত্বকে লাগে লালিত্যের স্পর্শ৷
# কেওড়ার জলে আছে অ্যান্টি এজিং উপাদান৷ ফলে ত্বকে রিঙ্কলস, বলিরেখা-সহ বার্ধক্যের অন্য ছাপ রোধ করে৷
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
Related Product
See All
Please Login To Comment
Login Now