** দুধ সংক্রান্ত তিনটি হারিয়ে যাওয়া সুন্নত!
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
দুধ মহান আল্লাহর বিরাট একটি নিয়ামত। তিনি মহাগ্রন্থ আল কুরআনে এ সম্পর্কে বলেন,
وَإِنَّ لَكُمْ فِي الْأَنْعَامِ لَعِبْرَةً ۖ نُّسْقِيكُم مِّمَّا فِي بُطُونِهِ مِن بَيْنِ فَرْثٍ وَدَمٍ لَّبَنًا خَالِصًا سَائِغًا لِّلشَّارِبِينَ
"আর গবাদিপশুর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে শিক্ষা। তার উদরস্থিত গোবর ও রক্তের মধ্য থেকে পান করাই বিশুদ্ধ দুধ, যা পানকারীদের জন্য সুস্বাদু।" (সুরা নাহল : ৬৬)।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুধ পছন্দ করতেন। তাইতো মেরাজের রাতে তার সামনে জিবরাইল (আ.) দুধ আর মধু পেশ করে যে কোনও একটি গ্রহণের কথা বলেন। তখন তিনি দুধ গ্রহণ করে পান করেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “দুধ খাবার ও পানীয় উভয়টির জন্য যথেষ্ট হয়।” আর বিজ্ঞানের আলোকে জানা যায়, দুধ স্বাস্থ্যের জন্য এক অতুলনীয় পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার। এ জন্যই দুধকে বলা হয়, ‘সুপারফুড’ বা সর্বগুণ সম্পন্ন খাবার।
যাহোক, আমরা সবাই কমবেশি দুধ পান করি। কিন্তু এ সংক্রান্ত যে সুন্নতগুলো রয়েছে সেগুলো অধিকাংশ মানুষই জানি না। যার কারণে সেগুলো মুসলিম সমাজ থেকে প্রায় হারাতে বসেছে। (আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমিন)
নিম্নে হাদিসের আলোকে দুধ সংক্রান্ত ৩টি সুন্নত তুলে ধরা হল:
❖ ১) দুধ প্রত্যাখ্যান না করা:
অর্থাৎ কেউ দুধ পান করতে দিলে বা উপহার হিসেবে দুধ দিলে তা ফেরত দেয়া উচিৎ নয়।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثَلاَثٌ لاَ تُرَدُّ: الْوَسَائِدُ وَالدُّهْنُ وَاللَّبَنُ
ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনটি বস্তু প্রত্যাখ্যান করা যায় নাঃ
১. বালিশ।
২. সুগন্ধি তেল/সুগন্ধি দ্রব্য ।
৩. ও দুধ।
[সুনানে তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪১/ শিষ্টাচার, পরিচ্ছেদ/৩৭. সুগন্ধি দ্রব্যের উপহার প্রত্যাখ্যান করা মাকরূহ, হা/২৭৯০-সনদ: হাসান]
قال الطيبي : يريد أن يكرم الضيف بالوسادة والطيب واللبن ،وهي هدية قليلة المنة، فلا ينبغي أن ترد . انتهى .
তিবি রহ. বলেন, এ কথার উদ্দেশ্য হল, মেহমানকে বালিশ, সুগন্ধি এবং দুধ দ্বারা আপ্যায়ন করা হয়। এগুলো খুব সামান্য উপহার। তাই তা ফেরত দেয়া অনুচিত।”
❖ ২) দুধ পান করার পর বিশেষ দুআ পাঠ:
ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إذا أكل أحدُكم طعامًا فلْيَقُل: اللهمَّ بارِكْ لنا فيه وأطعِمْنا خيرًا منه، وإذا سُقِيَ لبنًا فلْيَقُل: اللهمَّ بارك لنا فيه وزِدْنا منه، فإنَّه ليس شيءٌ يُجزِئ من الطُّعمِ والشَّرابِ إلَّا اللَّبَن
"তোমাদের কেউ খাবার খেলে সে যেন এ দু‘আ পড়ে:
اللهمَّ بارِكْ لنا فيه وأطعِمْنا خيرًا منه
"আল্ল-হুম্মা, বারিক লানা ফীহি, ওয়া আত্ব'য়িমনা খাইরান মিনহু"
অর্থ: "হে আল্লাহ, এতে আমাদের জন্য বরকত দান কর এবং আমাদেরকে এর চেয়ে উত্তম খাবার দাও।"
আর যাকে আল্লাহ দুধ পান করান সে যেন এ দুআ পড়ে:
اللّهُمَّ بَاركْ لنَا فيهِ وَزِدْنَا مِنهُ
"আল্ল-হুম্মা বারিক লানা ফীহি ওয়া যিদনা মিনহু"
অর্থ: "হে আল্লাহ, এতে আমাদের জন্য বরকত দাও এবং তা আরও বেশি করে দাও।"
এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, "দুধ ছাড়া আর কোন জিনিস নেই যা একই সাথে খাবার ও পানীয় উভয়টির জন্য যথেষ্ট হয়।" (সহিহ আবু দাউদ, হা/৩৭৩০)
উক্ত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুধ পান করার পর বিশেষ দুআ পাঠ করার কথা শিক্ষা দিয়েছেন।
❖ ৩) দুধ পান করার পর কুলি করা:
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم شَرِبَ لَبَنًا فَمَضْمَضَ وَقَالَ : إِنَّ لَهُ دَسَمًا
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুধ পান করার পর কুলি করলেন। অত:পর বললেন, “এর মধ্যে তৈলাক্ততা আছে।” [সহীহ বুখারি (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) অধ্যায়: ৬১/ পানীয় দ্রব্যসমূহ (كتاب الأشربة), হা/৫২০৮]
হে আল্লা।হ, তুমি আমাদের খাদ্য-পানীয় ও জীবন-জীবিকায় বরকত দান করো এবং তোমার আরও বেশি নিয়ামত দ্বারা আমাদেরকে সমৃদ্ধ করো। নিশ্চয় তুমি মহান দয়ালু ও দাতা। আমিন
* দুধে অবহেলা নয় *
* পৃথিবীর সব খাদ্যের সেরা খাদ্য দুধ। সর্বোচ্চ পুষ্টিমানের জন্যই দুধের শ্রেষ্ঠত্ব। দুধের অপরিহার্য উপাদান ল্যাকটোজ, যা দৈহিক গঠন, বিকাশ ও মেধা বৃদ্ধিতে সহায়ক। মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষার মূল উপাদান দুধ। বাংলাদেশের জনগণের একটি বৃহৎ অংশ তরল দুধ পান থেকে বঞ্চিত। দুধকে আমরা বিলাস খাদ্যের তালিকায় বন্দী রেখেছি। গরুর দুধে আছে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, খনিজ পদার্থ যেমন ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, কোবাল্ট, কপার, জিংক, আয়োডিন ও সেলিনিয়াম। গরুর দুধের কম্পজিশনে পানি ৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ, ল্যাকটোজ ৪ দশমিক ৮ শতাংশ, ফ্যাট ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, প্রোটিন ৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। গরুর দুধ সব পুষ্টির আধার ও শক্তির উৎস। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ক্যানসার ও হূদেরাগ প্রতিরোধে দুধের শক্তিশালী ভূমিকা প্রমাণিত হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রচলিত খাদ্য-সংস্কৃতি আমাদের মেধা ও স্বাস্থ্য রক্ষার পথে পর্বতপ্রমাণ বাধা। আমরা শিশুদের পান করাচ্ছি গুঁড়া দুধ এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার। বাবা-মা ও অভিভাবকদের অসচেতনতায় আমাদের সন্তানেরা ঝুঁকে পড়ছে চিপস, আচার, জুস ও আইসক্রিমের দিকে।
স্বাস্থ্যহানিকর এ খাদ্যাভ্যাসের জন্য মা-বাবার সঙ্গে শিক্ষকেরাও সমভাবে দায়ী। ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে প্রত্যক্ষ করেছি, বাংলাদেশের স্কুলগুলোর ফটকের সামনে ধুলাবালু ও আবর্জনাময় পরিবেশে বিক্রি হচ্ছে বিষাক্ত আচার, দূষিত আইসক্রিম, নিম্নমানের চকলেট, চানাচুর ও পচা ফলমূল। এ ব্যাপারে শিক্ষক ও অভিভাবকেরাও উদাসীন। পুলিশি ব্যবস্থা নয়, সামাজিক প্রতিরোধ ও সচেতনতার মাধ্যমে এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসচেতন করা ও সুস্থ জীবন সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া শিক্ষকদের কর্তব্য। ফাস্টফুডের প্রতি শিশুদের উদ্বেগজনক আসক্তি যে মাত্রায় বাড়ছে, তাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অনিবার্যভাবেই মেধাশূন্যতার কবলে পড়বে। মুঠোয় মুঠোয় রঙিন খাবার আর চিপসের সঙ্গে শিশুর দেহে ঢুকছে নানা মরণব্যাধির উপকরণ।
আমাদের জাতির অপুষ্টির অন্যতম কারণ দুধের অভাব। জনপ্রতি বছরে দুধ পান করার পরিমাণ যেখানে যুক্তরাজ্যে ২৪২ কেজি, অস্ট্রেলিয়ায় ২৪১, যুক্তরাষ্ট্রে ২৫৪, জার্মানিতে ২৪৭, ফ্রান্সে ২৬১, ডেনমার্কে ২৯৬ ও সুইডেনে ৩৫৬; সেখানে বাংলাদেশে মাত্র ২৬ কেজি। সম্প্রতি ব্র্যাকের এক অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত তথ্যে জানা গেছে, দেশের তিন কোটি ৬০ লাখ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। সুইডেনে ৪৫ হাজার লোকের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে দুই গ্লাস দুধ পান করে, তাদের চেয়ে যারা প্রতিদিন দেড় বা দুই গ্লাস দুধ পান করে, তাদের রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক কম। বাংলাদেশে চাহিদার চেয়ে দুধের ঘাটতি প্রায় ৮২ থেকে ৮৫ শতাংশ। ফলে পুষ্টিহীনতায় ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী। দেশে দুধের চাহিদা প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ টন, অথচ উৎপাদিত হচ্ছে মাত্র ২৩ লাখ টন।
আমরা আত্মীয়স্বজনের বাসায় বেড়াতে গেলে প্যাকেট-ভর্তি মিষ্টি বা পলিথিন-ভরা ফল নিয়ে যাই। অথচ এ দুটি খাদ্য ব্যয়বহুল এবং দূষণ বা ভেজালযুক্ত। মিষ্টিতে আছে স্যাকারিন, ক্ষতিকর হাইড্রোজ, নিম্নমানের গুঁড়া দুধ এবং ফলে আছে ফরমালিন—কোনোটাই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এর পরিবর্তে তরল দুধের প্যাকেট হাতে আত্মীয়স্বজনের বাসায় উপস্থিত হওয়া শ্রেয়। চট্টগ্রামে ২০০৭ সালে শীর্ষস্থানীয় এক কারখানায় ভেজালবিরোধী অভিযান চালিয়ে ম্যাড ইন ইউক্রেন লেবেল-যুক্ত ৪০০ মেট্রিক টন ভেজাল গুঁড়া দুধ আটক করেছিলাম। উচ্চ মহলের চাপে এ দুধ ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ করেছিলাম রাসায়নিক পরীক্ষায় মানুষের পান করার অনুপযোগী প্রমাণ করে। এভাবে মানুষের জীবন নীরবে ধ্বংস করা হচ্ছে। খাদ্যদূষণ, পানিদূষণ, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ—এ অভিশাপেই জর্জরিত এ দেশের মানুষের জীবন। চালে ইউরিয়া, সবজিতে কীটনাশক, মাছে ফরমালিন, মরিচে ইটের গুঁড়া, হলুদে সিসার গুঁড়া—কে দেবে জনগণের স্বাস্থ্যরক্ষার নিশ্চয়তা?
দুধের অভাবে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে মানুষের রোগব্যাধির হার বেড়ে যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, দুধের অভাবে শিশুদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা হ্রাস পেয়ে মস্তিষ্কের গঠন-প্রক্রিয়া ব্যাহত করে আইকিউ কমে যায়। এমনকি দুধের অভাবে হাড়ের গঠন দুর্বল হয়ে হাড় ভঙ্গুর হতে পারে। দুধের অভাবে যে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি, তা কখনো পুষিয়ে দেওয়া যাবে না অন্য খাবার খেয়ে। স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী, প্রতিদিন একজন মানুষের দুধের চাহিদা ২৫০ মিলিলিটার, কিন্তু আমরা পান করছি মাত্র ৪৫ থেকে ৭০ মিলিলিটার। সুষম খাবারের পরিবর্তে আমরা প্রলুব্ধ থালাভর্তি ভাত, অত্যধিক মসলা, তেলযুক্ত তরকারি ও চর্বিময় মাংস খেতে। বিশেষ করে ভাতের ওপর নির্ভরশীলতা আমাদের বেশি। মসলা ও তেলযুক্ত খাবার তৈরিতে যে শ্রম, জ্বালানি ও অর্থ ব্যয় হয়, তা দিয়ে দুই বেলা দুধ কিনে পান করলে পুষ্টি নিশ্চিত হতো। আমাদের পুষ্টিবঞ্চিত হওয়ার মূল কারণটাই প্রথাগত ও ভ্রান্ত খাদ্যসংস্কৃতি।
দুধ উৎপাদন বাড়িয়ে বাংলাদেশে শ্বেত বিপ্লব ঘটাতে হবে। অদূরদর্শী শিল্পায়নের কবলে পড়ে বাংলাদেশে খাদ্য ফলানোর জমি কমছে, মাছ ধরার পানিপ্রবাহ কমছে এবং গবাদিপশুর চারণভূমি কমছে। পরিবেশদূষণবিরোধী অভিযানের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, শিল্পায়নের নামে ডাইং কারখানা আর ইটভাটা নির্মাণ করে কৃষিজমি ও জলাভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে। এসবের পরিবর্তে দুগ্ধ খামার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসার জন্য ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানাচ্ছি। পার্বত্য ও উপকূলীয় এলাকায় সমবায় ভিত্তিতে দুগ্ধ খামার প্রতিষ্ঠার অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে।
দুধ অনন্যশক্তি ও অসাধারণ পুষ্টির আধার। দুধকে মূল খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে, পরিপূরক খাদ্য হিসেবে নয়। এক ব্রিটিশ নাগরিককে চিনি, যিনি ৭১ বছর বয়সেও দৈনিক দুই লিটার দুধ খেয়ে বার্ধক্যকে তারুণ্যে পরিণত করেছেন। দুধেই জীবন রক্ষা, দুধে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জাতির অস্তিত্ব রক্ষা। দুধের অভাবেই জরাগ্রস্ততা, ব্যাধিগ্রস্ততা।
** দেশী গরুর দুধ **
* শিশুদের মতো অনেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরও দুধ অপছন্দ। কেউ কেউ কেবল ভাতের সঙ্গে দুধ-কলা খেতে পছন্দ করেন। তবে খালি এক গ্লাস দুধ পানের ক্ষেত্রে তারা একেবারেই নারাজ। কিন্তু এই দুধকে বলা হয় সুপার ফুড বা সর্বগুণ সম্পন্ন খাবার। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি-১২, নিয়াসিন ও রিবোফ্লভিন। দুধের নানা পুষ্টিগুণ আপনাকে সুস্থ, সবল ও নিরোগ রাখতে পারে। অ্যাসিডিটির সমস্যা, পিরিয়ডের সময় তীব্র যন্ত্রণা, কাজের স্ট্রেসে অস্থির অবস্থা- এসব সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে এক গ্লাস দুধ। প্রতিদিন মাত্র এক গ্লাস দুধ পানেই এমন অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি আমরা।
** আসুন এবার জেনে নিই দুধের নানা উপকারিতা ঃ
১. ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড়ের গঠন মজবুত করে। দুধের ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি হাড় ও দাঁতে শোষিত হয়ে এদের গড়ন দৃঢ় করে। প্রতিদিন দুধ পান করলে দাঁত ক্ষয়ে যাওয়া, দাঁতে পোকা ও হলুদ ছোপ পড়া, হাড় ক্ষয়ের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
২. প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ পানে অন্যান্য খাবারের চাহিদা অনেকাংশে মিটে যায়। নাস্তার সময় দুধ পান করলে অনেক সময় ধরে সেটা পেটে থাকে। ফলে ক্ষুধা কম থাকে। এছাড়া দুধ পানের ফলে দেহের অনেক ধরণের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়। তাই ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগলে এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কম সময়ে ওজন কমাতে চাইলে, প্রতিদিনের ডায়েটে দুধ রাখুন।
৩. দুধে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল ফিটনেস বাড়ায় ও মানসিক চাপ দূর করতে সহায়তা করে। দুধ পানে ঘুমের উদ্রেক হয়, যার ফলে মস্তিষ্ক শিথিল থাকে ও মানসিক চাপমুক্ত হয়। সারাদিনের মানসিক চাপ দূর করে শান্তির ঘুম নিশ্চিত করতে প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ পান করুন।
৪. দুধ শরীর রি-হাইড্রেট করতে সাহায্য করে। ডিহাইড্রেশনের সমস্যায় ভুগলে এক গ্লাস দুধ পান করে নিন। সুস্থ বোধ করবেন।
৫. কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থাকলে এবং দুধজাতীয় খাবারে অ্যালার্জি না থাকলে রাতে ঘুমনোর আগে প্রতিদিন এক গ্লাস গরম দুধ পান করুন।
৬. শরীরে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের মাত্রা ঠিক না থাকলে প্রি মেনস্ট্রুয়াল সিন্ড্রোম হতে পারে। তাই পিরিয়ডের সময় পেট ব্যথা ও অ্যাসিডিটির সমস্যা হলে খেয়ে নিন এক গ্লাস দুধ।
৭. দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা মাংশপেশির গঠনে সহায়তা করে ও মাংশপেশির আড়ষ্টতা দূর করে। নিয়মিত ব্যায়ামের ক্ষেত্রে প্রতিদিন এক থেকে দুই গ্লাস দুধ খুবই উপকারী। শিশুদের মাংশপেশির গঠন উন্নত করতেও প্রতিদিন দুধ পান করা উচিত।
৮. প্রতিদিন আমরা এমন অনেক ধরণের খাবার খাই যার ফলে অ্যাসিডিটি হয় ও বুক জ্বালাপোড়া করে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ সমাধান, প্রতিদিন দুধ পান। দুধ পাকস্থলী ঠাণ্ডা রাখে ও বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা দূর হয়।
৯. দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে, যা দেহের ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। প্রতিদিন দুধ পানে ত্বক নরম, কোমল ও মসৃণ হয়।
১০. দুধ কোলেস্টোরল নিয়ন্ত্রণে রাখে ও রক্ত পরিষ্কারের পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।
সূত্র: মেডিকেল নিইজ টুডে।
Please Login To Comment
Login Now